আনন্দবাজারের বিশ্বকাপ একাদশে নেই কোহলি, যারা আছেন

সাউথ আফ্রিকার হাতের মুঠো থেকে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছে ভারত। ৭৫ রানের ইনিংস খেলে ‘ম্যান অব দ্য ফাইনাল’ হলেও আনন্দবাজার পত্রিকার করা বিশ্বকাপ একাদশে ঠাঁই পাননি বিরাট কোহলি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রাচীন ভারতীয় দৈনিকটির অনলাইন ডেস্ক প্রকাশ করেছে ১১ জনের তালিকা।

বিশ্বকাপ একাদশের ছয় ক্রিকেটারই ভারতের। রোহিত শর্মাকেই রাখা হয়েছে অধিনায়ক হিসেবে। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে একসঙ্গে অবসরে যাওয়া কোহলির জায়গা হয়নি ফাইনালের আগের ম্যাচগুলোতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে। খেলোয়াড় নির্বাচনের ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছে।

রোহিত শর্মা (অধিনায়ক): দ্বিতীয়বার টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলেন রোহিত। ২০০৭ সালের পর ২০২৪ সালে। একবার ক্রিকেটার হিসাবে। এবার অধিনায়ক হিসাবে। এবারের বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে করলেন ২৫৭ রান। তার স্ট্রাইক রেট ১৫৬.৭০। তিনটি অর্ধশতরান করেছেন। গোটা বিশ্বকাপে বিরাট কোহলির রান না পাওয়া পুষিয়ে দিয়েছেন। ওপেনার হিসাবে সফল রোহিত। সেরা একাদশের ওপেনার এবং অধিনায়ক তিনিই।

কুইন্টন ডি কক (উইকেটরক্ষক): রোহিতের সঙ্গে ওপেন করবেন ডি কক। সাউথ আফ্রিকার এই বাঁহাতি ওপেনার এবারের বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে ২৪৩ রান করেছেন। তার স্ট্রাইক রেট ১৪০.৪৬। বিশ্বকাপে সব থেকে বেশি রান করেছেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। কিন্তু আফগান ওপেনারের স্ট্রাইক রেট কম। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে সেটার গুরুত্ব রয়েছে। আর গুরবাজ় দু’টি ম্যাচে শূন্য করেছেন। অর্থাৎ রান করলেও তার ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। সেই কারণেই সেরা একাদশে রাখা হয়নি গুরবাজকে। উইকেটের পেছনে দায়িত্ব সামলাবেন তাই ডি কক।

ট্রাভিস হেড: অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করলেও এই দলে তিন নম্বরে রাখা হয়েছে হেডকে। তিনি সেখানেও খেলতে অভ্যস্ত। এবারের বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচে ২৫৫ রান করেছেন হেড। গত বছর এক দিনের বিশ্বকাপ জেতানো ক্রিকেটারের স্ট্রাইক রেট ১৫৮.৩৮। শুরুতে রোহিত বা ডি ককের মধ্যে কেউ আউট হলে বিপক্ষের উপর চাপ তৈরির জন্য সেরা ক্রিকেটার হেডই। প্রয়োজনে অফস্পিনও করতে পারেন তিনি।

সূর্যকুমার যাদব: টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে সূর্যকে বাদ দেয়া কঠিন। আর ফাইনালে ওই ম্যাচ জেতানো ক্যাচটি নেয়ার পর তাকে বাদ দেয়া আরও কঠিন। আট ম্যাচে ১৯৯ রান করেছেন। স্ট্রাইক রেট ১৩৫.৩৭। দলে থাকার ক্ষেত্রে সূর্যের লড়াই ছিল সাউথ আফ্রিকার হেনরিখ ক্লাসেনের সঙ্গে। কিন্তু স্ট্রাইক রেট, রান এবং ধারাবাহিকতায় ক্লাসেনকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন ভারতের সূর্য। তাই সেরা একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি।

হার্দিক পান্ডিয়া: অলরাউন্ডার হার্দিক এবারের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ব্যাটে-বলে সফল। আইপিএলের ব্যর্থতার ছাপ ভারতের জার্সিতে পরেনি। হার্দিক ৮ ম্যাচে ১৪৪ রান করেছেন। একটি ফিফটিও আছে। তার স্ট্রাইক রেট ১৫১.৫৭। বল হাতে হার্দিক ১১টি উইকেট নিয়েছেন। ফাইনালের শেষ ওভারটিও তার করা। খুব বেশি রানও খরচ করেননি। ওভার প্রতি আট রানেরও কম দিয়েছেন হার্দিক।

মার্কাস স্টয়নিস: দলের দ্বিতীয় অলরাউন্ডার অস্ট্রেলিয়ার স্টয়নিস। হার্দিকের মতো তিনিও পেসার। ব্যাট হাতে স্টয়নিস ৭ ম্যাচে ১৬৯ রান করেন। তার স্ট্রাইক রেট ১৬৪.০৭। দলের ফিনিশার তিনিই। আবার বল হাতে মিডল ওভারেও উইকেট তুলতে পারেন। আসরে ১০টি উইকেট নিয়েছেন। এই দলের ভারসাম্য বজায় রাখবেন হার্দিক এবং স্টয়নিস।

অক্ষর প্যাটেল: দলের তৃতীয় অলরাউন্ডার অক্ষর। ভারতের বাঁহাতি স্পিনার আট ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়েছেন। তার থেকে বেশি উইকেট অনেক স্পিনারের থাকলেও ব্যাট হাতেও সফল অক্ষর। শেষবেলায় ব্যাট করে খুব বেশি রান হয়তো করার সুযোগ পাননি। কিন্তু দলের প্রয়োজনে যে রান করার সেটা করে দিয়েছেন। শেষবেলায় নেমে তার করা রান ভারতকে একাধিক ম্যাচে সুবিধা করে দিয়েছে। সেমিফাইনালে ম্যাচ জেতানো বোলিং তো আছেই।

রশিদ খান: স্পিনে অক্ষরের সঙ্গী আফগানিস্তানের রশিদ। আফগান লেগ স্পিনার এবারের বিশ্বকাপে ১৪টি উইকেট নিয়েছেন। তার দলকে সেমিফাইনালে তুলেছেন। স্পিনারদের মধ্যে যৌথভাবে এবারের বিশ্বকাপে সব থেকে বেশি উইকেট তার। ১৪ উইকেট নিয়ে তার সঙ্গী বাংলাদেশি রিশাদ হোসেন। টাইগার লেগ স্পিনারের জায়গা না হলেও রশিদ রয়েছেন আনন্দবাজারের সেরা একাদশে। বাঁহাতি এবং ডানহাতি স্পিনারের জুটি গড়বেন রশিদ এবং অক্ষর। বৈচিত্র্য থাকবে দলে।

জাসপ্রীত বুমরাহ: বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার বুমরাহ। ৮ ম্যাচে ১৫টি উইকেট নিয়েছেন। ওভার প্রতি ৪.১৭ রানের বেশি দেননি গোটা প্রতিযোগিতায়। ফাইনালেও ভারতের জয়ের নেপথ্যে ছিল তার বোলিং। বুমরাহ চার ওভারে এত কম রান দেন যে, তাতে চাপে পড়ে যায় প্রতিপক্ষ। সেই সঙ্গে উইকেটও নেন। যা আরও চাপ বৃদ্ধি করে। এই দলের বোলিং আক্রমণকেও নেতৃত্ব দেবেন তিনি।

ফজলহক ফারুকী: আফগান পেসার এবারের প্রতিযোগিতায় সব থেকে বেশি উইকেট নিয়েছেন। আট ম্যাচে ১৭টি উইকেট নিয়েছেন। তিনিও খুব বেশি রান দেননি। ওভার প্রতি ৬.৩১ রান দিয়েছেন ফারুকি। বুমরাহ এবং ফারুকী মিলে যে কোনও বিপক্ষকে চাপে ফেলতে পারেন।

আর্শদীপ সিং: ফারুকীর মতো আর্শদীপও বাঁহাতি পেসার। তিনিও ১৭ উইকেট নিয়েছেন। তার এত উইকেট নেয়ায় এই দলে জায়গা হয়েছে তার। দুই বাঁহাতি পেসারের সঙ্গে বুমরাহ মিলে যে কোনও বিপক্ষের ঘুম কেড়ে নিতে পারে।