নেতা এরশাদকে নিয়ে আবেগাপ্লুত অভিনেতা সোহেল রানা

সাবেক সেনাপ্রধান, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা গেছেন রবিবার সকাল পৌনে ৮টার। সারাদেশের মানুষ এই নেতার ‘মৃত্যুতে কাঁদছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, প্রযোজক ও চলচ্চিত্র অভিনেতা সোহেল রানা।

রবিবার দুপুরে সিএমএইচ হাসপাতালে এরশাদের মরদেহ দেখে বাসায় ফিরে চ্যানেল আই অনলাইনকে আলাপে তিনি এরশাদকে নিয়ে মহানুভবতার গল্পও শোনালেন এই অভিনেতা।

সোহেল রানা বলেন, এরশাদ সাহেবের মৃত্যুতে আমি শুধু একা ব্যথিত নই, সারা দেশের মানুষও ব্যথিত হয়েছেন। সেজন্য কাঁদছেন। কারণ, বাংলাদেশে এখন যে উন্নতির দিকে যাচ্ছে সেটার মূল ভিত্তি তৈরি করেছিলেন এরশাদ।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতির ধর্মীয় বিষয়গুলো সামনে এনে সোহেল রানা বলেন, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা, শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করা, টেলিভিশনে পাঁচ ওয়াক্ত আযান প্রচার করা। এগুলো সবই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে হয়েছে।

এছাড়া দেশের অনেককিছুর কাঠামো তৈরি করে দেশকে উন্নতির দিকে প্রথম ঠেলে দিয়েছেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এমনটাই বললেন সোহেল রানা।

তিনি বলেন, এরশাদ একজন প্রকৃত লিডার। যিনি দেশের ১০ বছর পরের ভালোমন্দ চিন্তা করতেন। সবকিছু ছাপিয়ে মানুষকে উনি ভীষণ ভালোবাসতেন। ব্যক্তিগতভাবে তার সাথে আমার যে সম্পর্ক ছিল সেখান থেকে দেখেছি, সাধারণ দারোয়ানের জন্যও সুপারিশ করতেন। এতে অনেকসময় অবাক হতাম। উনি বলতেন, আমার একটা সই-এ যদি একটি পরিবার ভালো থাকে তাহলে উপকার করতে সমস্যা কোথায়? এই মানসিকতা আমাদেরও নেই। এই জায়গাটায় তার কোনো তুলনা নেই।

সোহেল রানা বলেন, সাভারের রানা প্লাজায় ভবন ধ্বসে শতশত মানুষের মৃত্যু হলো। সেখান থেকে কিছু মানুষের দেখাশোনার দায়িত্ব উনি নিয়েছেন। মাসের ১ তারিখে ওইসব অসহায় পরিবারের কাছে টাকা পৌঁছে যেত। এর বাইরে তার কাছে কেউ গেলে খালি হাতে ফিরত না। দূর থেকে কোনো ভিক্ষুক দেখলে উনি লোক দিয়ে টাকা পাঠাতেন।

‘একহাতে দিলে অন্য হাতকেও কিছু জানতে দিতেন না। একজন মানুষ হিসেবে তার সাহায্য করার অন্তরটা অনেক বড় ছিল। আমার জানা মতে এরশাদ সাহেবের খরচে ২০ টির মত ছেলেমেয়ে দেশের বাইরে লেখাপড়া করছে। গত ২০ বছরে কতশত ছেলেমেয়েকে যে উনি নিজের টাকায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন তার ঠিক নেই। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিতর্ক থাকতে পারে। একেকজন তাকে একেকভাবে দেখতে পারে। কিন্তু তার পাশে থেকে আমি দেখেছি, সে অত্যন্ত ভালো মানুষ।’-আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন চিত্রনায়ক সোহেল রানা।

সর্বশেষ মাসদেড়েক আগে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পথে এরশাদের সঙ্গে বিমানবন্দের দেখা হয়েছিল সোহেল রানার। এরপর দেশে ফিরে সামরিক হাসপাতালে তিনি ভর্তি হলে মাঝে মধ্যেই দেখতে যেতেন সোহেল রানা। আজ সকালে এরশাদের মৃত্যুর খবর পেয়েই ছুটে গিয়েছিলেন হাসপাতালে।

সোহেল রানা মনে করেন, তার চলে যাওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো সেটা শিগগির পূরণ হবে না। তার মতো দূরদর্শী রাজনীতিবিদ সহজে এদেশে আর আসবে না। শেষবার নির্বাচনে তিনি চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে পাঁচটি প্রদেশে ভাগ করতে। এটা ভবিষ্যৎ ভেবে বলেছিলেন। যাতে মানুষ শুধু শহরমুখী না হয়। একজন প্রকৃত রাজনীতিবিদের দূরদর্শীতা এরশাদ সাহেবের মতো হওয়া উচিত।

৮৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বেলা ১টার কিছু পরই এরশাদের মরদেহ সেনানিবাস কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নেয়া হয়। পরে মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এরশাদের দ্বিতীয় জানাযা হবে। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় পার্টির কাকরাইল অফিসে মরদেহ নেয়া হবে। সাধারণ জনগণের সুবিধার্থে তৃতীয় জানাযা হবে বাদ আছর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। দুই রাত সিএমএইচের হিমঘরে এরশাদের মরদেহ রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে।

১৬ জুলাই সকাল ১০টায় হেলিকপ্টার যোগে মরদেহ রংপুরে নেয়া হবে। রংপুর জেলা স্কুল মাঠে অথবা ঈদগাহ মাঠে বাদ জোহর চতুর্থ জানাযা ওইদিন বিকেলে ঢাকায় বনানী সামরিক কবরস্থানে এরশাদকে দাফন করা হবে।