দেশের প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত

গ্লোবাল ফ্যাটি লিভার দিবস উপলক্ষে গতকাল বুধবার “এখনই পদক্ষেপ নিন, ফ্যাটি লিভার পরীক্ষা করান“ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা বলেন, দেশের প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। এই সমস্যা এখন নিরব মহামারী হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি মানুষের জীবন যাপনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, পরিবর্তন আসছে খাদ্যাভাসে, কমছে কায়িক শ্রম। এতে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে লিভারসহ অসংক্রামক রোগ। এসব রোগ প্রতিরোধে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

বুধবার ১২ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) হেপাটলজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ও সমকাল এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রাজধানীর তেজগাঁয়ে সমকাল কার্যালয়ের সভাকক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়।এতে সভাপতিত্ব করেন সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান।

স্বাগত বক্তব্যে আবু সাঈদ খান বলেন, চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম না করা ব্যক্তিদের এই রোগ বেশি হয়। এ ধরনের অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বাজেট বাড়ানো জরুরি।

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউ হেপাটলজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: মামুম আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, ফ্যাটি লিভার দেহে ক্ষতি করে ধীরে ধীরে। এ কারণে মানুষ এতে কম গুরুত্ব দেয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম আব্দুর রহমান বলেন, এর চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। সারা বিশ্বে মাত্র দুটি ওষুধ দিয়ে এই রোগ প্রতিরোধে কাজ করা হচ্ছে।

বিএসএমএমইউ এর লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম এ রহিম বলেন, লিভারে পাঁচ শতাংশের বেশি চর্বিযুক্ত হলে এক পর্যায়ে প্রদাহ হয় তখন তাকে ন্যাস বলা হয়। এক্ষেত্রে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজের হেপাটলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ আশরাফুল আলম বলেন, হাসপাতালে সেবা নেওয়া ৯০ শতাংশের মধ্যে ফ্যাটি লিভার দেখা যাচ্ছে।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা: ইজাজুল হক বলেন, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, গ্রামে ৩১ শতাংশ মানুষের ফ্যাটি লিভার সমস্যা। বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ানস অব সার্জনসের সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার মোঃ শহিদুল্লাহ বলেন, ৯০ শতাংশ অভিভাবক সন্তানের ওবিসিটির বিষয়ে গুরুত্ব দেন না। খাদ্যাভাস পরিবর্তনের কারণে এ সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্রাকটিসশনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা: মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, খাদ্যাভাস পরিবর্তনের কারণে গ্রামের মানুষদের মধ্যে ফ্যাটি লিভার দেখা দিচ্ছে। এই রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার পাশাপাশি গবেষণায় জোর দিতে হবে।

ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল উদ্দিন বলেন, জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণের আগে এই রোগে কতজন আক্রান্ত বের করতে হবে।এজন্য জাতীয় পর্যায়ে গবেষণা প্রয়োজন।

স্বাধীনতার চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা: জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এ ধরনের অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সরকারের বিনিয়োগ রয়েছে। এটি নিয়ে কিভাবে জাতীয় পর্যায়ে গবেষণা করা যায় বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই আলোচনা করব।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার বায়েজিদ খুরশিদ রিয়াজ বলেন, প্রতি পাঁচজনে একজন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। অস্বাস্থ্যকর খাবার, অনিয়মিত জীবন যাপনের কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ এপিডেমিওলজি সোসাইটির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শাহ মনির হোসেন।