মাসুদুজ্জামানের আবৃত্তি সন্ধ্যা ‘সাতরঙ্গ দুপুরের কাব্য’

রাজধানীর বেইলি রোডে নাটক সরণির বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে হয়ে গেল আবৃত্তিশিল্পী মাসুদুজ্জামানের একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান ‘সাতরঙ্গ দুপুরের কাব্য’। অনুষ্ঠানে শিল্পী বিভিন্ন কবির বাছাই করা ২৭টি কবিতা আবৃত্তি করেছেন।

শনিবার (২২ জুন) সন্ধ্যায় স্রোত আবৃত্তি সংসদ এ আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে স্বকীয়স্নিগ্ধ ও সুদৃঢ় ভঙ্গিমায় মাসুদুজ্জামান আবৃত্তি করেন বুদ্ধদেব বসুর ‘চিল্কায় সকাল’, মানস পালের ‘তোমাকে লেখা প্রথম প্রেমের চিঠি’, আবুল হাসানের ‘একলা বাতাস’, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘হে প্রবাহিনী’, তারাপদ রায়ের ‘চিঠিপত্র’, দাউদ হায়দারের ‘সেই কথা বলা হলো না’, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘চাবি’, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ‘অভিমানের খেয়া’, শ্রীজাতের ‘প্রেমপর্ব-২’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ছুটির আয়োজনে’, অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়ের ‘নিমন্ত্রণ’, শীলা মোস্তফার ‘চিঠি’, ফরিদ কবিরের ‘শাদা কাগজ’, তুহিন সমদ্দারের কবিতা ‘রেবতী এক ব্যস্ত শহর’, জয় গোস্বামীর ‘স্নান’, শহীদ কাদরীর ‘সংগতি’, শঙ্খ ঘোষের ‘আড়ালে’, দাউদ হায়দারের ‘বলেছিলাম সাতরঙ্গ দুপুর এলে’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘একটি দিন’, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘উটপাখী’, শেখর বরণের ‘ভালো লাগে না’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বাঁশি’, মামুন নেসার য়াহমাদের ‘প্লাটফর্মে থামলে পরে ট্রেন’, শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ‘টেলিফোনে এক রং-নাম্বার’, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘লগ্নহারা’, নাসির আহমেদের ‘সেই শুধু জানে’ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নির্ঝরিণী’।

আবৃত্তিশিল্পী মাসুদুজ্জামানের শৈশব-কৈশোর কেটেছে কীর্তনখোলা নদীবিধৌত বরিশাল শহরে। চার বছর বয়স থেকে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘরের মাধ্যমে সংস্কৃতি অঙ্গনে পদচারণা শুরু। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর পরই গ্রাম থিয়েটারের শাখা সংগঠন বরিশাল থিয়েটারের মাধ্যমে গ্রুপ থিয়েটার চর্চার সাথে সম্পৃক্ততা।

১৯৯১ সাল থেকে দেশের অগ্রগণ্য আবৃত্তি সংগঠন ‘স্রোত আবৃত্তি’ সংসদ এর সাথে যুক্ত মাসুদুজ্জামান। একই সময়ে ঢাকার অন্যতম নাট্যদল নাট্যকেন্দ্রের সাথেও পথচলা শুরু। স্রোত আবৃত্তি সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন, বর্তমানে নির্বাহী পর্ষদের সদস্য হিসেবে রয়েছেন তিনি।

এছাড়া সারাদেশের আবৃত্তি সংগঠনগুলোর জাতীয় মোর্চা বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন মাসুদুজ্জামান।

আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও ভারতের কোলকাতা, শিলিগুড়ি, মেদিনীপুর, আগরতলা, ধর্মনগরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেছেন তিনি। সাংগঠনিক আবৃত্তি চর্চায় তিনি বিভিন্ন কর্মশালায় প্রশিক্ষণ ও প্রযোজনা ভিত্তিক অনুষ্ঠান নির্দেশনার কাজও করছেন নিয়মিত।

পেশাগত জীবনে একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও ডিজিটাল স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম (ওটিটি) এর অনুষ্ঠান ও কন্টেন্ট প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

চার বোনের এক ভাই মাসুদুজ্জামান। তার স্ত্রী সামসুন্নাহার মনি ও কন্যা আরিবাহ আফ্রোদিতি জামান তাথৈকে নিয়েই তার সংসারজীবন।

অনুষ্ঠান শেষে প্রতিক্রিয়ায় আবৃত্তিশিল্পী মাসুদুজ্জামান বলেন, ‘আমি আমার দর্শক-শ্রোতার প্রতি কৃতজ্ঞ। মিলনায়তন পূর্ণ দর্শক দেখতে যেকোন শিল্পীর প্রাণ ভরে যায়। আমারও তাই হয়েছে। জানি না কতটুকু দিতে পেরেছি, তবে দর্শক শ্রোতাদের যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা আমার ভবিষ্যৎ চর্চার পাথেয় হয়ে থাকবে। কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের সংগঠন স্রোত আবৃত্তি সংসদের সকল বন্ধুদের প্রতি। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই অনুষ্ঠান সার্থক ও সফল হয়েছে।’

অনুষ্ঠানটির নেপথ্যের কারিগরদের মধ্যে মঞ্চসজ্জায় ছিলেন ড. রবিন দাস, আলোক পরিকল্পনায় অম্লান বিশ্বাস ও আবহসংগীতে অসীম কুমার নট্ট। সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরসহ দেশের গুণী আবৃত্তিশিল্পী ও সংস্কৃতিজনরা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।