যে নাটকে নিজেদের খুঁজে পাচ্ছেন শত শত নারী

টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম মিলিয়ে এবার ঈদ প্রচার হয়েছে কয়েক’শ নাটক। এখনো ঈদের আমেজ ফুরায়নি। যার বেশীর ভাগই রোমান্টিক-কমেডি অবথা ট্রেন্ডি গল্পের। তবে এসবের ভিড়ে ব্যতিক্রমী কিছু কাজও চোখে পড়েছে। এরমধে অন্যতম জনপ্রিয় নির্মাতা ভিকি জাহেদের পরিচালনায় নির্মিত ‘তিথিডোর’।

চ্যানেল আইয়ের পর্দায় ঈদে প্রচার হওয়া ‘তিথিডোর’ পাওয়া যাচ্ছে ‘চ্যানেল আই প্রাইম’ ইউটিউব চ্যানেলে। বৃহস্পতিবার রাতে আপলোড হওয়া নাটকটির হয়তো ভিউয়ে রেকর্ড নেই, কিন্তু শত শত মানুষের মন্তব্য নাটকটিকে বিশেষ করে তুলেছে।

বিশেষ করে নারী দর্শকরা ‘তিথিডোর’ দেখে নিশাত চরিত্রটির মধ্যে নিজেদের খুঁজে ফিরছেন! মন্তব্যকারীদের বেশীরভাগই নারী। তুলি মৃধা নামের একজন দর্শক নাটকটি দেখে লিখেছেন, সময়োপযোগী একটা নাটক। বর্তমানে হাজারো মেয়েদের সাথে মিল! শুধু বয়স্ক অবিবাহিত মেয়েরাই ভালো জানে তাদের জীবনটা কত কষ্ট! ধন্যবাদ ভিকি জাহেদ! ধন্যবাদ মেহজাবীন!”

কানিজ ফাতেমা লিখেছেন, “এই নাটকটা দেখছিলাম আর নিজের সাথে রিলেট করছিলাম সব। আসলে বয়স হয়ে যাওয়া, শরীরে বয়সের ছাপ, মানুষের কটু কথা, মিডল ক্লাসের একটা অনার্স বা মাস্টার্স পড়ুয়া মেয়ের জন্য যে কতটা কষ্টের শুধু তারাই জানে।” তানিয়া নামের আরেক দর্শক লিখেছেন,“মনে হলো নিজের জীবনের গল্প দেখলাম। ডিভোর্স হবার পরে থেকে সমাজের মানুষের কতো প্রশ্ন, আবার কবে বিয়ে হবে,সাথের সবার হয়ে গেছে, ত্রিশ যদিও হয়নি ২৮ চলছে। তবুও মানুষের প্রশ্ন নিতে পারিনা। বুক ভার হয়ে থাকে। সুইসাইড করতেও চেয়েছিলাম, পারিনি সাহসে কুলায়নি। আর নতুন করে বিয়ে করতে ইচ্ছা হয়না। কারণ, ছেড়ে যাওয়া মানুষটাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। ঠুনকো অজুহাতে ছেড়ে চলে গেলো, কিন্তু তিক্ততা এনে তার প্রতি ভালোবাসা কমাতে পারিনা। বেঁচে আছি নিজের জন্য আর পরিবারের জন্য। দুনিয়ায় বেঁচে থাকাটাই আসল আলহামদুলিল্লাহ।”

অন্য আরেক নারী দর্শক লিখেছেন,“নিজের সাথে অনেক কিছু রিলেট করতে পারলাম। মন খারাপ লাগলো আবার শেষটুকুর জন্য ভালোও লাগছে। থ্যাংক ইউ ভিকি জাহেদ ভাই। অঙ্কিত নাওয়ার নামের একজন লিখেছেন,“বাংলা নাটক এমন অদ্ভুত সুন্দর হয় জানা ছিলনা। মধ্যবিত্ত বাবা মায়েরা বিশেষ করে মেয়ে বাচ্চাদের প্রতি এমনি হয়। এ নাটক তাদেরকে বসায়া দেখানো উচিত। নাটকের এ সংলাপটা খুব সুন্দর প্রতিটি বয়সের আলাদা সৌন্দর্য আছে। নাটকটা একটা হার্স রিয়ালিটি অব টাইম। আর মেহজাবীন খুব গুণী শিল্পী। সবাই খুব দরদ দিয়ে কাজ করেছেন। গল্প ও নির্দেশনা অসাধারণ।” হাবিবা আক্তার লিখেছেন,“কী নির্মম বাস্তবতা ফেইস করছি আমরা হাজার হাজার মেয়েরা। নাটকটা এত বাস্তব, পৃথিবীতে কেউ কারো না।” ফারজানা আফরোজ লিখেছেন, “খুব বাস্তববাদী একটা নাটক। সত্যি প্রতিটা কথা, প্রতিটা চিত্র যেন জীবন থেকেই নেওয়া। আবুল হায়াত স্যারের রোলটা ভালো ছিল এবং ওনার কথাগুলো সত্যিই অনেক ইনস্পায়ারিং আর মেহজাবীনের কথা তো আলাদা করে বলতে হবে না। সে বরাবরই অতুলনীয়। ধন্যবাদ ভিকি জাহেদ ভাইয়া এত সুন্দর একটা কাজ আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।”

একসময় ঈদে ডজনেরও বেশি নাটকে দেখা যেত জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরীকে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই সংখ্যাটা কমিয়ে এনেছেন তিনি। গত ঈদে একাধিক নাটকে দেখা গেলেও এবারের ঈদে তার একমাত্র কাজ ‘তিথিডোর’। ভিকি জাহেদ পরিচালিত নাটকটি রচনা করেছেন জাহান সুলতানা।

‘তিথিডোর’ প্রসঙ্গে মেহজাবীন আগেই জানিয়েছেন, ‘নাটকটি মূলত একটি চরিত্রকে ঘিরে। আত্মহত্যার প্রবণতায় ভুগছেন এমন একজন মানুষকে ঘিরেই এ নাটকের গল্প। গল্পটা এ সময়ের জন্য উপযোগী। আত্মহত্যা করার প্রবণতা যাদের মধ্যে থাকে তাদের কারণে সমাজে এবং পরিবারের ওপর যে প্রভাব পড়ে তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সমাজে এমন অনেক মেয়েই আছেন, দেখতে বেশ হাসি-খুশি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে যে কী এক যন্ত্রণায় সময় পার করছে, তা বাইরে থেকে কেউই অনুধাবন করতে পারবে না। আমার কাছে মনে হয়েছে এ ধরনের গল্প এ সময়েই বলা উচিত। আমি নাটক এখন খুবই কম করি। কিন্তু তারপরও এ ধরনের গল্প সমাজের মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য শিল্পী হিসাবে আমার দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এ নাটকে অভিনয় করা।’